ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড (Islami Bank Credit Card)

Islami Bank Credit Card - ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড

ডিজিটাল লেনদেনের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ এবং সিকিউর অর্থ ব্যবস্থা হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। তাই বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ Credit Card এর সুবিধা গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিচ্ছে। তারমধ্যে Islami Bank Credit Card অন্যতম।

প্রযুক্তির এই যুগে আমরা প্রায় সকলেই Credit Card এর মাধ্যমে লেনদেন করতে আগ্রহী। তবে Credit Card এর সেবা সীমিত হওয়ার কারণে অনেকের ইচ্ছে থাকা সত্বেও এটি ব্যবহার করতে পারি না।

তবে আজ আমি আপনাকে বলে দেবো বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পাবেন। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জেনে নিতে পারবেন ক্রেডিট কার্ড করতে কি কি লাগে এবং ক্রেডিট কার্ড করার নিয়মাবলী সম্পর্কে।

ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড

ইসলামী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড গুলোকে IBBL Khidmah card বলা হয়। খিদমাহ ক্রেডিট কার্ডগুলো মূলত ইসলামী শরিয়াহ এর ‘উজরা’ ধারণার ভিত্তিতে চালু করা হয়েছে।

এই কার্ডটি ব্যবহারে ক্ষেত্রে গ্রাহকদের থেকে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ফি চার্জ করা হবে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড মনে করে সাধারণ মানুষের জন্য নগদ অর্থ বহনের যে ঝুঁকি রয়েছে, সেই ঝুঁকি এড়াবে Islami Bank Credit Card.

ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড এর বেশকিছু প্রকারভেদ আছে। তা হলোঃ

  • Silver Card
  • Gold Card
  • Platinum Card
  • Priority Platinum Card ইত্যাদি।

এই প্রত্যেকটা কার্ডের একটি নির্দিষ্ট টাকার লিমিট রয়েছে। অর্থাৎ, একসাথে কার্ডটিতে আপনি কতটাকা রাখতে পারবেন তা যথাক্রমে নিচে তুলে ধরা হলোঃ

সিলভার কার্ড লিমিটঃ ,০০,০০০/- টাকা, গোল্ড কার্ড লিমিটঃ ২,০০,০০০/- টাকা, প্লাটিনাম কার্ড লিমিটঃ ৩,০০,০০০/- টাকা এবং প্রিওরিটি প্লাটিনাম কার্ড লিমিটঃ ৫,০০,০০০/- টাকা।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এদেশে বৃহত্তম একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বেশীরভাগ মানুষই চায় ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার জন্যে।

আমিও সাধারণত ইসলামী ব্যাংকের Priority Platinum Card টি ব্যবহার করে থাকি।

Islami Bank Credit Card-এর সুবিধা

() ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড ইসলামী শরিয়াহ সম্মত।

(২) খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে কার্ড লিমিট পর্যন্ত বাকিতে পণ্য ক্রয় করা যায়।

(৩) শহরের প্রায় অধিকাংশ বিপণী, শপিংমল এবং মাঝারি ও বড় দোকানে এই কার্ড দিয়ে টাকা পরিশোধ করা যায়।

(৪) Khidmah card এর মাধ্যমে বিমান, ট্রেন, ও জাহাজের টিকিট কেনা সহ অনলাইনে আরো নানা সেবা ক্রয় করা যায়।

(৫) ব্যাংকের চেক ছাড়াই দেশ-বিদেশের যে কোন জায়গায় ATM booth থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়। তাছাড়া, এটিএম থেকে নিদিষ্ট সীমার ২৫ শতাংশ বেশী টাকা নগদ উত্তোলন করা যায়। (এক্ষেত্রে বাড়তি চার্জ প্রযোজ্য হবে)

(৬) খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে রেস্তোরাঁ, হোটেল, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার বুকিং নেওয়া যায় এবং এর বিল পরিশোধ করা যায়।

(৭) ইন্টারনেটে যে কোন ই-কমার্স ট্রানজেকশন ও বিভিন্ন বুস্টিং সার্ভিস গ্রহণ করা যায়।

(৮) দেশ-বিদেশের যে কোন প্রান্ত হতে ডলার বা অন্যান্য যে কোন মুদ্রা দেশে নিয়ে আসা যায়। তাছাড়া, গুগল এডসেন্স, গুগল এডমোব, অ্যাফিলিয়েট এর টাকা এই কার্ডে মাধ্যমে দেশে আনতে পারবেন। (এটা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ)।

(৯) ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে কেনাকাটা ও লেনদেনে কোন ঝুঁকি নেই।

(০) Islami Bank Credit Card-এর মাধ্যমে সুপারস্টারের ক্রয়ের উপর আকর্ষণীয় ডিকাউন্ট সুবিধা থাকে এবং যে কোন লেনদেনে সর্বনিম্ন চার্জ প্রযোজ্য হয়।

 খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড বানাতে কি কি লাগবে?

ইসলামী ব্যাংক খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য পেশাগত ভাবে বিভিন্ন ধরণের পার্সোনাল ডকুমেন্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হয়। তারমধ্যে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের ডকুমেন্টে সামান্য ডিফরেন্ট লক্ষ্য করা যায়। নিচে তা সুস্পভাবে তুলে ধরা হলো।

চাকরিজীবীরা যেই ডকুমেন্ট জমা দিতে হবেঃ

  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র / পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স।
  • চাকুরির প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক আইডি কার্ড / ছবিসহ জন্ম-নিবন্ধন কপি (কমিশনার কর্তৃত সত্যায়িত)।
  • ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • ই-টিন সার্টিফিকেট / ট্যাক্স প্রদান করা স্বীকৃত স্লিপ।
  • সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত বেতন সার্টিফিকেট।
  • সক্রিয় মোবাইল নাম্বার।
  • সিআইবি রিপোর্ট ইত্যাদি।

ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও ব্যক্তির ডকুমেন্টঃ

  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র / পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স।
  • ই-টিন সার্টিফিকেট / ট্যাক্স প্রদান করা স্বীকৃত স্লিপ।
  • ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স।
  • ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ / বিদ্যুৎ বিল / টেলিফোন বিল।
  • পেশাজীবীদের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত  সদস্য সার্টিফিকেট।
  • সক্রিয় মোবাইল নাম্বার।
  • সিআইবি রিপোর্ট ইত্যাদি।

ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড বিল

আপনি যদি islami bank থেকে ক্রেডিট কার্ড নেন, তবে তারা আপনার থেকে বাৎসরিক একটি চার্জ কেটে নেবে। যেই চার্জটা মূলত ক্রেডিট কার্ডে উপর ভিত্তি করবে।

ক্রেডিট কার্ডের বাৎসরিক চার্জ (প্রাথমিক কার্ড)

  • সিলভার কার্ড -এর বার্ষিক ফি ,৫০০/- টাকা।
  • গোল্ড কার্ড -এর বার্ষিক ফি ২,০০০/- টাকা।
  • প্লাটিনাম কার্ড -এর বার্ষিক ফি ২,৫০০/- টাকা।
  • প্লিওরিটি প্লাটিনাম কার্ড এর বার্ষিক ফি ৩,৫০০/- টাকা।

তবে আপনি যদি এক বছরে এই কার্ডগুলো দিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ লেনদেন করেন তবে আগামী বছরের জন্য আপনার কোন ক্রেডিট কার্ড বিল দিতে হবে না। নিচে লেনদেনের পরিমাণ তুলে ধরা হলোঃ

  • সিলভার কার্ড -এর বার্ষিক ফি ,৫০,০০০/- টাকা।
  • গোল্ড কার্ড -এর বার্ষিক ফি ২,৫০,০০০/- টাকা।
  • প্লাটিনাম কার্ড -এর বার্ষিক ফি ৩,০০,০০০/- টাকা।
  • প্লিওরিটি প্লাটিনাম কার্ড এর বার্ষিক ফি ৩,৫০,০০০/- টাকা।

কার্ড রিপ্লেসমেন্ট ফি

  • সিলভার কার্ড ফি ২০০/- টাকা।
  • গোল্ড কার্ড ফি ৩০০/- টাকা।
  • প্লাটিনাম কার্ড ফি ৫০০/- টাকা।
  • প্লিওরিটি প্লাটিনাম কার্ড ফি ৭০০/- টাকা।

খিদমাহ কার্ড নেওয়ার আগে

Credit card কে MasterCard বলা হয়। আপনি যদি ব্যাংক থেকে ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন সার্পোট করে এমন Islami Bank Credit Card নিতে চান, তবে অন্যান্য ডকুমেন্টর পাশাপাশি অবশ্যই পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হবে।

পাসপোর্ট ছাড়া ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাকে International credit card দেবে না। ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড বলতে আপনি যেই কার্ডের মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাহিরে টাকা ছাড়াও অন্যান্য কারেন্সিতে লেনদেন করতে পারবেন।

আপনার কার্ড যদি International নাহয় তবে সেই কার্ড দিয়ে আপনি শুধুমাত্র Taka -এর মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। অর্থাৎ, দেশের ভেতরগত সকল লেনদেন করা যাবে। তবে ইন্টারন্যাশাল কোনো লেনদেন এই কার্ড দিয়ে করা যাবে না।

আর আপনার Credit card যদি International হয় তবে সেই কার্ডে টাকা ছাড়া অন্যান্য কারেন্সি বা ডলার লোড করতে পারবেন এবং সেই কার্ড দিয়ে যে কোনো ধরণের International transactions করা যাবে। এই ধরণের কার্ডকে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড বলা হয়।

উল্লেখ্য, Islami Bank Credit Card এর বিশেষ একটি সুবিধা হলো, আপনি যেকোন ধরণের কারেন্সি এই কার্ড দিয়ে বাংলাদেশে নিতে আসতে পারবেন, তবে ব্যাংক আপনাকে সেই কারেন্সি দেবে না, আপনি ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা পাবেন।

যারা পেশাগতভাবে প্রবাসী, ফ্রিল্যান্সার এবং অনলাইন থেকে ইনকাম করেন, তারা অবশ্যই উপরোল্লিখিত বিষয়টা মনোযোগের সাথে আমলে নেবেন।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা উপভোগ করতে চান, তবে ইসলামী ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড আপনার জন্য খুবই দারুণ চয়েজ হতে পারে। তবে ক্রেডিট কার্ডের ভেরিয়েন্ট গুলো অবশ্যই দেখে নেবেন।

কারণ,সিলভার কার্ড, গোল্ড কার্ড, প্লাটিনাম কার্ড এবং প্লিওরিটি প্লাটিনাম কার্ড গুলোতে মোটামুটি পার্থক্য রয়েছে। তাছাড়া, টাকারও লিমিট রয়েছে।

যাইহোক, আমি আশাকরি Islami Bank Credit Card নিয়ে আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। এই বিষয়ে যদি আপনার আরো কোনো প্রশ্ন থাকে তবে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ

IT Nirman

যত জ্ঞান-ধন করেছি অর্জন জীবনের প্রয়োজনে,
তার সবটুকুই বিলাতে চাই সৃষ্টির কল্যাণে।

2 comments

  • আসসালামু ও’য়ালাইকুম।ইসলামী শারি’য়াহ কর্তৃক পরিচালিত ইসলামী ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের লোন পরিশোধের ক্ষেত্রে সার্ভিসচার্জের নামে একটি সূনির্দিষ্ট টাকা আরোপ করে,সেটি কি প্রচলিত সুদের মধ্যে পড়ে?

    • ওয়া আলাইকুম সালাম। প্রিয় পাঠক, ক্রেডিট কার্ড একটি প্রযুক্তিগত সুবিধা, যা গ্রাহকদেরকে অর্থ আদান-প্রদানে সহজলভ্যতা এনে দিয়েছে। এটি তাদের নিজস্ব সেবা। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে চার্জ বা এর পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েজ। (বিস্তারিত জানতে আপনার নিকটস্ত মুফতি সাহেবের শরণাপন্ন হতে পারেন)।

Your Header Sidebar area is currently empty. Hurry up and add some widgets.