দীর্ঘদিন মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়

দীর্ঘদিন মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়

প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন প্রায় সবার হাতে হাতেই মোবাইল ফোন রয়েছে। মোবাইল ব্যবহারকারীদের প্রায় অধিকাংশেরই মোবাইলের ব্যাটারি জনিত সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ থাকে। তাই অনেকেই জানতে চায়, কিভাবে মোবাইল চার্জ দিলে ব্যাটারি ভালো থাকে বা  মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় কি?

মোবাইল একটি পোর্টেবল ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। তাই এটিকে পাওয়ার আপ করার জন্য ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। মোবাইলে ব্যবহৃত ব্যাটারি গুলো সাধারণত লিথিয়াম আয়ন প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়ে থাকে।

আবার প্রত্যেকটা ব্যাটারির একটি নির্দিষ্ট পাওয়ার লিমিট বেঁধে দেওয়া হয়। এই সীমা অতিক্রম করলেই ব্যাটারিতে বিভিন্ন সমস্যা শুরু হয়।

যেমন – মোবাইলের ব্যাটারি ফুলে যায়, মোবাইলে চার্জ থাকে না, মোবাইল হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় এবং মোবাইল অতিরিক্ত গরম হয় ইত্যাদি।

এই ধরণের সমস্যা থেকে কিভাবে বাঁচবেন এবং আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখার উপায় কি এই বিষয়েই আজকের আলোচনা।

চলুন জেনে নিই যে কোনো ধরণের স্মার্টফোনের চার্জ ধরে রাখার উপায় কি এবং ব্যাটারি জনিত সমস্যা থেকে কিভাবে বাঁচবেন তার আদ্যোপান্ত।

মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজের সহজলভ্যতার জন্য আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করি।

দিনের অনেকটা সময় প্রয়োজনে এবং অপ্রয়োজনে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে কাটিয়ে দেই।

অনেক সময় মোবাইলের চার্জের দিকে আমাদের দৃষ্টিই যায় না। আবার দীর্ঘ সময় ব্যবহারের ফলে মোবাইল যে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে তাও খেয়াল থাকে না।

আরও পড়ুনঃ মোবাইলে বাংলা কিবোর্ড ডাউনলোড ও A-Z সেটিং।

মোবাইলের ব্যাটারি জনিত সমস্যা গুলো ঠিক এখান থেকেই শুরু হয়। যাইহোক, মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার জন্য সেরা ৫ টি টিপস নিচে দেওয়া হলো।

, ব্যাটারির আদর্শ চার্জ লেভেল

আমাদের অনেকেই আছে, যারা মোবাইলের চার্জ ০% না আসা পর্যন্ত মোবাইলকে ছাড়তে চায় না।

আবার এমনও ব্যবহারকারী আছে যারা মোবাইলকে চার্জে দিয়েও টিপাটিপি করে।

এই ব্যাপারগুলোকে ব্যাটরি নষ্ট হওয়ার জন্য প্রধাণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোনের ব্যাটারিকে পুরো ০০% পর্যন্ত চার্জ করা ঠিক নয়! আবার ৪০% এর নিচেও সার্চ লেভেল না আনার পরামর্শ।

ব্যাটরির আদর্শ চার্জ লেভেল হলো ৪০% থেকে ৮০% পর্যন্ত।

সবসময় ব্যাটারির চার্জ ৪০% থেকে ৮০% এর মধ্যে রাখলে পারফর্মেন্সের জন্য সর্বোত্তম।

বিশেষজ্ঞরা এমনটাও বলেন যে, সাপ্তাহে অন্তত একবার ১০০% চার্জ করা এবং একবার পুরোপুরি চার্জ শেষ করা। এতে ব্যাটারির হেলথ ভালো থাকে।

নতুন মোবাইলের ব্যাটরিতে চার্জ দেওয়া নিয়ে আমাদের মাঝে একটি কুসংস্কার বিদ্যমান।

সেটি হলো নতুন ফোন কেনার পর ৮ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত চার্জ দেওয়া। গবেষক এরিক লাইমার এই বিষয়টিকে ভুল বা কুসংস্কার বলে অভিহিত করেন!

কেননা, বর্তমানে মোবাইলে যেই ধরণের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় এগুলো মূলত লিথিয়াম আয়ন প্রযুক্তিতে তৈরি।

আরও পড়ুনঃ ৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মোবাইল ২০২২

এই ধরণের ব্যাটারিকে ৮ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এই রিকোয়ারমেন্ট শুধুমাত্র নিকেল ব্যাটারির ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য।

আপনার  মোবাইলের ব্যাটরিকে দীর্ঘদিন ভালো পারফর্মেন্সের সাথে ব্যবহারের জন্য বিশেষজ্ঞদের এই মন্তব্য গুলোকে আমলে নিতে পারেন।

০২, অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করা

স্মার্টফোনের সাথে যেই চার্জারটি দেওয়া হয় এটিই অরিজিনাল চার্জার।

এই চার্জারটি মূলত আপনার ব্যবহৃত মোবাইলটিকে টার্গেক করেই তৈরি করা হয়েছে।

তাই এর ভোল্টেজ, পাওয়ার ইনপুর্ট এবং আউটপুর্ট আপনার মোবাইলের ব্যাটারির জন্য যথাপোযুক্ত। একটুও কম-বেশী নয়।

কিন্তু আপনি যখন আপনার মোবাইল ফোনটিকে লোকাল কোনো চার্জার দিয়ে চার্জ করেন, তখন ব্যাটারিতে যেই পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবারহ হওয়ার কথা, তা কখনই হয় না।

আর এটা ব্যাটরিতে খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ফলে ব্যাটারিটা খুব দ্রুতই ডেমেজ হওয়া শুরু করে।

এজন্য সবসময় চেষ্টা করবেন, মোবাইলের অরিজিনাল চার্জার দিয়েই আপনার মোবাইল ফোনটিকে চার্জ করার জন্য।

এতে ব্যাটরির হেলথ দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।

০৩, একটানা দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহার উচিত নয়

কোনো কিছুরই অতিরিক্ত ব্যবহার ভালো নয়। মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারটা হয় ইন্টারনেট চালিয়ে, গেম খেলে এবং মুভি দেখে।

আপনি কি জানেন, মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার আপনাকে প্রভাবিত করে সে নিজেও ডেমেজ হয়ে যাচ্ছে!

আমরা যখন মোবাইল ফোনকে একটানা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করি, তখন মোবাইলের ব্যাটারিতে অনেক বেশী প্রেসার ক্রিয়েট হয়।

আরও পড়ুনঃ সেরা ১০টি মোবাইল এন্টিভাইরাস অ্যাপস

তখন ব্যাটারির পারফর্মেন্সেও পরিবর্তন দেখা দেয়। অর্থাৎ, চার্জ দ্রুতই শেষ হয়ে যায়।

এভাবে কয়েকমাস ব্যবহারের ফলে ব্যাটারির ব্যাকআপ আগের তুলনায় অনেকটা কমে আসে।

তাই নিয়ন্ত্রণের ভেতরেই আমাদেরকে মোবাইল ব্যবহার করা উচিত।

০৪, ব্যাটারির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা

মোবাইলের ব্যাটারির আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ১৫ ডিগ্রি। এরচেয়ে বেশী হলে ব্যাটারি তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ মিস্টার লাইমার বলেন, লিথিয়াম আয়ন প্রযুক্তিতে তৈরি কোনো মোবাইলের ব্যাটারিকে যদি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ব্যবহার করা হয়, তবে এই ব্যাটরিটি প্রতি বছর ২০% পর্যন্ত ধারণক্ষমতা হারায়।

আর কেউ যদি মোবাইলের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিকে ৪০ -৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিয়ে যায়, তখন সেই ব্যাটারি বিস্ফোরণ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। এমনটি অনেক সময় বিস্ফোরণও ঘটে।

ব্যাটারিকে আপনি যতবেশী প্রেসার দেবেন, ব্যাটারি ততবেশীই গরম হয়। আর অতিরিক্ত গরমের কারণে ব্যাটারি খুবই দ্রুতই ডেমেজ হয়ে যায়।

যারা প্রশ্ন করেন, মোবাইলের ব্যাটারি ফুলে যায় কেন? এর সহজ উত্তর হলো ’ব্যাটারিতে অনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার প্রভাব’। হ্যাঁ, এটাই সত্যি।

আপনি যদি আমার কাছে জানতে চান, মোবাইলের ব্যাটারি ফুলে গেলে কি করা উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো, ব্যাটারি পরিবর্তন করে নিন।

আরও পড়ুনঃ মোবাইল স্লো হলে কি করবেন?

কারণ, মোবাইলের ব্যাটারি ফুলে গেলে কি করতে হবে তখন এটা ভাবার সময় নয়। ব্যাটারি ফুলে যাওয়ার আগেই আপনাকে ব্যাটারির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

০৫, সিম ও ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার

আমাদের স্মার্টফোন গুলো সাধারণত সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয় নেটওয়ার্কিয়ে। আমরা যদি সেখানে সামান্য সচেতনতা অবলম্বন করি, তবে মোবাইলের চার্জ ব্যাকআপ বেশী পাওয়া সম্ভব।

অপ্রয়োজনে আপনার মোবাইলের ব্লুটুথ, ওয়াফাই, ইন্টারনেট, জিপিএস, সিঙ্ক্রোনাইজেশন, টাচস্ক্রিন ভাইব্রেশন প্রভৃতি ফিচার বন্ধ রাখুন, এতে ব্যাটারির চার্জ কম খরচ হবে।

আবার আপনি যখন মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তখন যদি নেটওয়ার্ক খুব বেশী স্লো মনে হয়, তবে ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ রাখুন।

কেননা, ইন্টারনেট স্লো থাকাকালীন সময়ে ব্যাটরির উপর অনেক বেশী চাপ ক্রিয়েট। তখন মোবাইল ফোনটি স্বাভাবিকতার চেয়ে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়।

ঠিক সেই সময় প্রায় সব ধরণের মোবাইলের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি গুলো ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করে। যা ব্যাটারিতে খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

আরও পড়ুনঃ ঘরে বসে মোবাইলে আয় করার সেরা উপায়

আবার আপনি যদি এমন কোনো এলাকায় যান, যেখানে সিমে নেটওয়ার্ক থাকেনা। সেখানে আপনি মোবাইলের Airplane Mode ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে মোবাইলের চার্জ অযথা খরচ হবে না।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ

প্রিয় পাঠক, আমি চেষ্টা করেছি মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায় গুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্যে। উপরোক্ত মতামত গুলো শুধু আমার নয়; বরং বিশ্ব বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদরা এই ধরণের মতামত দিয়ে থাকেন।

তাই এগুলোকে এড়িয়ে চলা আমাদের কারো জন্যই উচিত হবে না। আপনি যদি আপনার ফোনের চার্জ ধরে রাখতে চান তবে অবশ্যই সচেতনতার সাথে নিয়ন্ত্রণের ভেতরেই মোবাইল ব্যবহার করুন।

তবে আশা করা যায়, আপনার মোবাইলের ব্যাটারিটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো পারফর্মেন্স করবে ইনশাআল্লাহ। আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

IT Nirman

যত জ্ঞান-ধন করেছি অর্জন জীবনের প্রয়োজনে,
তার সবটুকুই বিলাতে চাই সৃষ্টির কল্যাণে।

Add comment

Your Header Sidebar area is currently empty. Hurry up and add some widgets.