লেখালেখি করে আয় | ক্যারিয়ার গঠনের দারুণ অপর্চুনিটি

লেখালেখি করে আয়

লেখালেখি করে আয় | সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এখন লেখালেখির সাথে প্রায় অধিকাংশ মানুষই সম্পৃক্ত। কেউ চার দেওয়াল বিশিষ্ট ঘরের কোণে বসে বসে ডায়েরির কালিহীন পাতাগুলো কলমের কালি দিয়ে ভরছে সৃজনশীল বিষয় বস্তু নিয়ে, আবার কেউ মনের আবেগ জরিত সুখ-দুখের কথাগুলো সবার মাঝে শেয়ার করছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার খোলা পাতায়।

কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার এই লেখাগুলো কতটুকু মূল্যবান? সোশ্যাল মিডিয়াগুলো আমাদের তৈরি সৃজনশীল কন্টেন্ট ব্যবহার করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ইনকাম করছে। অথচ, আমরা যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখালেখি করছি তারা লাইক, কমেন্ট ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছি না। কখনই হয়ত এমন ধারণা আপনার মনে সৃজন হয়নি। আমি আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছি না। জাস্ট আপনার অনুভূতিকে একটু চাঙ্গা করার চেষ্টা করছি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখার এপিট ওপিট

আপনি হয়ত জানেন, পৃথিবীর কোন সোশ্যাল মিডিয়াই নিজস্ব কন্টেন্ট দিয়ে সমৃদ্ধ হতে পারেনি। তারা নিজস্ব একটি সিস্টেমের মাধ্যমে আপনার-আমার কন্টেন্ট দিয়ে পৃথিবীজুড়ে মার্কেটিং করার মাধ্যমে আয় করছে। অথচ, এই কন্টেন্টগুলো আমার-আপনার। দুখের বিষয় হলো, আমাদের কন্টেন্টগুলোকে ভার্চুয়াল লাইক, কমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে আমাদেরকে মাতিয়ে রেখে তারা বাণিজ্যিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। এতে আমাদের কোন বাণিজ্যিক লাভ নেই।

▶️ অনলাইন ইনকাম (এর আদ্যোপান্ত জানুন)

আমি-আপনি, আমরা যারা সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যবহার করে লেখালেখি করি বা আমাদের তৈরি কোন কন্টেন্ট সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করি, আমরা হয়ত কখনই আমাদের সৃজনশীল কন্টেন্টগুলোর ভ্যালু বা মূল্য নির্ণয় করতে পারি না। সত্যি বলতে নিজের সৃজনশীল কন্টেন্টগুলো মূল্যহীন; যার সঠিক মূল্য কেউ দিতে পারবে না।

তবুও আমরা চাইলে আমাদের সেই লেখালেখি বা কন্টেন্ট গুলোকে একটি গুছালো সিস্টেমে নিয়ে এসে বিভিন্ন উপায়ে আয় করতে পারি। অনেকেই এমন আছে লেখালেখি করতে গিয়ে নিজ ক্যারিয়ার লাইফের কথা ভুলেই যায়। আবার অনেক প্রতিভাবান লেখক অর্থের অভাবে লেখালেখি ছেড়ে দেয়।

অনেকেই হয়ত আবেগাপ্লুত হয়ে নিজেকে লেখলেখিতে অল্প কিছুদিনের জন্য কানেক্টেড করে। মেক্সিমাম লেখকই চায় তাদের লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নিতে, কিন্তু সঠিক গাইডলাইন না পাওয়ার কারণে নিজেদের প্রতিভাগুলোকে গলাটিপে হত্যা করে! তখন লেখলেখির জগতটা তার জন্য পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। জীবনে ঘীরে বসে এক গভীর হতাশা। এই প্রতিবেদনটি তাদের জন্য খুবই কাজে আসবে, যারা বাংলায় লেখালেখি করে আয় করতে চান।

লেখালেখি করে আয়

প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে প্রায় অধিকাংশ মানুষই কোন না কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ। হতে পারে সে একজন ক্রিকেট প্রেমী বা বাস্তব সম্মত কোন জ্ঞানের অধিকারী। আপনার যদি ক্রিকেট সম্পর্কে জ্ঞান থাকে, তবে আপনি নিশ্চয় ক্রিকেট সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল লিখতে পারবেন। অথবা আপনি যদি টেকনোলজি বিষয়ে অভিজ্ঞ হন তবে অবশ্যই টেকনোলজি বিষয়ে আপনি লিখতে পারবেন।

আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবর্তে কন্টেন্ট রাইটিং বা ব্লগিং সিস্টেমটি ফলো করে লেখালেখি করেন, তবে সুনিশ্চিত উপায়ে আপনি লেখালেখি করে আয় করতে পারবেন। কন্টেন্ট রাইটিং করার জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইট প্রয়োজন নেই। আর ব্লগিং করার জন্য ওয়েবসাইটের শরণাপণ্য হওয়া জরুরি। লেখালেখি করে অনলাইন থেকে আয় করার তিনটি জনপ্রিয় পদ্ধতি রয়েছে।

  • কন্টেন্ট রাইটিং করে আয়
  • পার্সোনাল ব্লগ থেকে আয়
  • গেস্ট ব্লগ লিখে আয়

উপরোল্লিখিত তিনটি বিষয়ের ছোট্ট বিশ্লেষণ নিম্নরূপঃ

কন্টেন্ট রাইটিং করে আয়

কন্টেন্ট রাইটিং মূলত লেখালেখির পেশা। এজন্য আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে হবে এবং লেখালেখি বিষয়ে এক্সপার্ট হতে হবে। তাছাড়া, ভাষার গ্রামার এবং শব্দচয়নে নিজের অভিজ্ঞতার পরিচয় দিতে হবে। কন্টেন্ট রাইটিং পেশাটি অত্যন্ত উচ্চমানের পেশা। যেটা সবাই করতে পারে না।

▶️ ইউটিউব থেকে আয় (করার নিয়ম)

যে কোন ভাষায় আপনি কন্টেন্ট রাইটিং করতে পারেন। এক্ষেত্রে ইংলিশ কন্টেন্ট রাইটিংয়ের চাহিদা সেবচেয়ে বেশী। আপনি যদি বাংলা কন্টেন্ট রাইটিং করতে চান, এটাও করতে পারেন। যদিও বাংলা কন্টেন্ট রাইটিং জগৎটা এখনো তেমন সমৃদ্ধ হয়নি। তবে আস্তে আস্তে বাংলা কন্টেন্ট রাইটিংয়ের চাহিদা বাড়ছে।

বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কন্টেন্ট রাইটিংয়ের জন্য কোম্পানির সাথে অর্থ চুক্তি হয়। আবার নিশ বা ক্যাটাগরির উপর অর্থের হিসেব কম-বেশী হতে পারে। সাধারণ কন্টেন্ট রাইটারের দ্বারা তৈরি ২০০০ ওয়ার্ডের একটি ইংরেজি কন্টেন্ট ৫০০ -২৫০০ টাকা হতে পারে। বাংলা কন্টেন্টের ক্ষেত্রে ৮০০ –৫০০ টাকা হতে পারে।

তবে প্রো কন্টেন্ট রাইটারেরা ২০০০ ওয়ার্ডের একটি ইংরেজি কন্টেন্টের জন্য ৬০০০-৮০০০ টাকা চার্জ করবে এবং বাংলা কন্টেন্টের জন্য ২০০০-৩৫০০ টাকা চার্জ করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রায় কন্টেন্টই এসইও ফ্রেন্ডলি হতে হবে। কেননা, এই ধরণের কন্টেন্ট ওয়েবসাইটে পাবলিশ করার জন্য কেনা-বেচা হয়।

পার্সোনাল ব্লগ থেকে আয়

লেখালেখি করে আয় করার জন্য সবচেয়ে ভালো একটি পদ্ধতি হলো পার্সোনাল ব্লগ। অর্থাৎ, আপনার নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট, যেই ওয়েবসাইটের পুরো মালিকানা আপনার। আপনি সেই ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করবেন এবং ব্লগিংয়ের মাধ্যমে সেই ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত সকল অর্থ একান্তই আপনার। এখানে কেউ ভাগিদার নেই।

তবে পার্সোনাল ব্লগ থেকে আয় করার জন্য আপনাকে অনেকটা পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া, প্রাথমিক ভাবে পার্সোনাল ব্লগ সিস্টেমটি তৈরি করার জন্য আপনাকে সামান্য কিছু অর্থ ওয়েবসাইট তৈরিতে ইনভেস্ট করতে হবে। এবং ওয়েবসাইট পরিচালনার সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনার উপরই ন্যাস্ত থাকবে।

▶️ ফেসুবকে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?

ব্লগিং ক্যারিয়ার গঠনের জন্য প্রথমে একটা ওয়েবসাইট প্রয়োজন হবে। আর সেই ওয়েবসাইটটি তৈরি করার জন্য প্রথম পর্যায়ে এতো বেশি টাকা ইনভেস্ট করার প্রয়োজন নেই। ৬-৭ হাজার টাকার মাধ্যমে ভালো মানের একটা পার্সোনাল ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। আর সেই ব্লগ ওয়েবসাইটটিতে নিয়মিত লেখা পাবলিশ করার মাধ্যমে ভিজিটর নিয়ে আসতে হবে। ব্লগে যত বেশী ভিজিটর প্রবেশ করবে লেখকের ততই প্রফিট জেনারেট হবে।

পার্সোনাল ব্লগ থেকে কত আয় হবে, তার নির্দিষ্ট কোন জবাব নেই। আপনার ব্লগে যতবেশী সময় দেবেন, ততবেশী অর্থ উপার্জনের অপর্চুনিটি রয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, ব্লগ থেকে কিভাবে আয় হয়? তারা এই আর্টিকেলটি পড়ুনঃ ব্লগ থেকে আয়

ব্লগিং ক্যারিয়ারে পার্সোনাল ব্লগিং পদ্ধতিটি ফলো করে লেখালেখি করে আয় করার জন্য সবচেয়ে সুইটেবল মনে হয়। যদিও এখানে পরিশ্রমের হারটা সামান্য বেড়ে যায়। এটা ছাড়া অনলাইনে লেখালেখি করে আয় করার আরো একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো গেস্ট ব্লগিং।

গেস্ট ব্লগ লিখে আয়

এটা মূলত দাসত্বের লেখালেখি। আপনি অন্যের ব্লগ ওয়েবসাইটে লিখবেন, যার বিনিময়ে আপনাকে টাকা দেবে। তবে এখানে বিভিন্ন নিয়মকানুন ফলো করতে হবে। যেমন, আপনার লেখার ক্যাটাগরি তারা সিলেক্ট করে দেবে। অর্থাৎ, তারা যদি আপনাকে বলে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে ৮০০ ওয়ার্ডের আর্টিকেল লিখুন। তবে আপনাকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়েই লিখতে হবে।

অন্যদিকে আপনার যদি পার্সোনাল ব্লগ ওয়েবসাইট থাকে, তবে আপনাকে কেউ কোন নিশ বা ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে দেবে না। আপনার ইচ্ছে অনুযায়ীই আপনি লিখতে পারবেন। তাছাড়া আরো একটি বড় প্রবলেম হলো, ব্লগ ওয়েবসাইটের মালিকেরা আপনার লেখা থেকে আয়কৃত অর্থের বড় একটি পারসেন্টিজ কেটে নিবে। যেমন, আপনার লেখা থেকে ৫ হাজার টাকা আয় হলো, আপনাকে তারা ২৫০০ দেবে। এক্ষেত্রে ব্লগ পলিসি অনুযায়ী কম-বেশী হতে পারে।

▶️ ফ্রিল্যান্সিং কি? (বিস্তারিত জানুন)

তবে বাংলায় লেখালেখি করে আয় করার জন্য গেস্ট ব্লগিংকে আমি পার্সোনালি রেফার করি না। এতে আপনি খুব বেশী লাভবান হতে পারবেন না। মাসে হয়ত ০ –২ হাজার টাকা সর্বোচ্চ সম্মানি পেতে পারেন। বাংলায় লেখালেখি করে আয় করার ওয়েবসাইট অনেক আছে। তারমধ্যে আমরাও আমাদের পাঠকদের জন্য এই সুবিধা দিয়ে থাকি।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ

লেখালেখি করে আয় কারার বাহিরেও একজন লেখকের জন্য বিভিন্ন প্রফিট রয়েছে। তারমধ্যে লেখক পরিচিতি বৃদ্ধি পাওয়া, সম্মান বৃদ্ধি পাওয়া। এগুলো ছাড়াও একজন লেখক লেখালেখির মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে উপকার পেতে পারে। তবে লেখালেখি করে আয় করার বিষয়টা খুববেশী সহজও নয় আবার খুববেশী কঠিনও নয়। যেটাকে মাঝামাঝি অবস্থানে রাখ যায়।

কন্টেন্ট রাইটিং বা ব্লগ ওয়েবসাইটে লেখালেখির বিষয়টা সোশ্যাল মিডিয়ার লেখাগুলো থেকে সামান্য আপডেট। কন্টেন্ট রাইটিং বা ব্লগিং করতে গিয়ে লেখালেখিকে একটু কোয়ালিটির ছোঁয়া দিতে হবে। যেনো আপনার গ্রাহক এবং দর্শকেরা আপনার লেখালেখিতে উপকৃত হয়।

ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে এমন লেখা আপনার ওয়েবসাইটে পাবলিশ করতে হবে, যেই লেখাগুলো পড়ে একজন ভিজিটর দ্বিতীয়বার ব্লগ সাইটে ভিজিট করতে আগ্রহী হয়। কন্টেন্ট রাইটিংয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আপনি যদি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নিতে চান, তবে এই আর্টিকেলের কথাগুলো ফলো করতে পারেন।

লেখালেখি করে আয় করার শুরুটা একটু কঠিন মনে হতে পারে। তবে পরিশ্রমের সাথে কাজ করলে এই সফলতা দীর্ঘ মেয়াদি হবে। লেখক হিসেবে নিজেকে গড়তে ব্লগিং ক্যারিয়ারের বিকল্প নেই। কেননা অধিকাংশ লেখক লেখালেখি থেকে ঝরে যায় অর্থের অভাবে। বলতে গেলে লেখালেখির জীবনটা জীবিকা অর্জনে এক মহা বাঁধা সৃস্টি করে।

এটা মূলত হয় পথঘাট না চেনার কারণে। সচেতন একজন লেখক কোনোনা কোন ভাবে তার লেখাগুলোকে সার্ভিস হিসেবে পাঠকদের কাছে প্রোভাইড করছে। হয়ত পেপার বই বা ই-বুক এর মাধ্যমে, পত্রিকায় লিখে (গেস্ট ব্লগিং), ব্লগিং করে বা কন্টেন্ট রাইটিং ইত্যাদির মাধ্যমে। আর এভাবেই সচেতন লেখকেরা লেখালেখির মাধ্যমেই দারুণ ক্যারিয়ার গঠন করছে।

প্রিয় পাঠক, আমি আশা করছি লেখালেখি করে আয় করার বিষয়টা আপনি ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন। এই বিষয়ে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে এখনই কমেন্ট করে ফেলুন!

IT Nirman

যত জ্ঞান-ধন করেছি অর্জন জীবনের প্রয়োজনে,
তার সবটুকুই বিলাতে চাই সৃষ্টির কল্যাণে।

Add comment

Your Header Sidebar area is currently empty. Hurry up and add some widgets.